ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডেস্কে বসে কাজ করেন? জেনে নিন এক্সিকিউটিভ চেয়ার আসলে কতটা উপকারী হতে পারে আপনার জন্য।
প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডেস্কে বসে কাজ করা আমাদের অনেকের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকালে অফিসে ঢুকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা স্ক্রিনের সামনে থাকা, বিষয়টি শুধু ক্লান্তিকরই নয়, শারীরিকভাবেও অনেক চাপের। আর তাই শুধু একটা চেয়ার নয়, প্রয়োজন একটি সঠিক সাপোর্ট সিস্টেম।
আপনি যদি অফিস ফার্নিচারের দোকানে কখনো গিয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই একাধিক গঠনগতভাবে আকর্ষণীয় এবং আরামদায়ক ‘এক্সিকিউটিভ চেয়ার’ চোখে পড়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো , এগুলো কি শুধুই স্টাইলিশ? নাকি বাস্তবেই দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার জন্য উপযুক্ত?
আমরা যারা আরামদায়ক ও স্টাইলিশ অফিস ফার্নিচার নিয়ে কাজ করি, তাদের কাছে এটা একটা সাধারণ প্রশ্ন। চলুন, একটু জেনে আসা যাক।
এই লেখাটি পড়ার আগে আমাদের আগের ব্লগ পোস্ট “What are the top places to buy stylish CEO tables in Bangladesh?,” পড়ে নিতে পারেন। এতে আপনি সুন্দর টেবিল কেনার উপযুক্ত স্থান সম্পর্কে জানতে পারবেন।
এক্সিকিউটিভ চেয়ার (Executive Chair)কী?

যারা দীর্ঘ সময় অফিসে বসে কাজ করেন, তারা জানেন , একটা ভালো চেয়ার কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আর সেখানেই আসে এক্সিকিউটিভ চেয়ারের কথা। এটা কেবল একটি বসার আসন নয়, বরং আরামের সঙ্গে সঙ্গে কাজের পরিবেশে যোগ করে স্টাইল ও গুরুত্ব।
এক্সিকিউটিভ চেয়ার মানেই , উঁচু ব্যাকরেস্ট, নরম কুশন, উন্নত মানের কাপড় বা চামড়ার আস্তরণ, আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ , বিল্ট-ইন লাম্বার সাপোর্ট, যা আপনার কোমরের জন্য দারুণ সহায়ক।
দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, ব্যবহারেও তেমনই আরামদায়ক। এটা এমন একটি চেয়ার যা আপনাকে শুধু বসার সুবিধাই দেয় না, বরং দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রেখে কাজ করতে সাহায্য করে। অনেকেই বলেন, “এটা একবার ব্যবহার করলে সাধারণ চেয়ারে আর ফিরে যাওয়া সম্ভব না!”
চাকরির গুরুত্ব, দায়িত্ব, এবং প্রতিদিনের চাপে নিজের শরীর ও মনকে যদি একটু আরাম দিতে চান , তাহলে এক্সিকিউটিভ চেয়ার হতে পারে আপনার সেরা সঙ্গী।
এক্সিকিউটিভ চেয়ারের মূল সুবিধা
আরগোনমিক ডিজাইন:
এক্সিকিউটিভ চেয়ার সাধারণত হাই-ব্যাক সাপোর্ট, লাম্বার সাপোর্ট ও অ্যাডজাস্টেবল ফিচারসহ তৈরি হয়। Harvard Health Publishing জানায়, আরগোনমিক সিটিং পজিশন মেনে চললে ঘাড় ও কোমরের ব্যথার আশঙ্কা ৩৫% কমে।
দীর্ঘ সময়ের জন্য আরাম:
যারা প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা বা তার বেশি ডেস্কে বসেন, তাঁদের জন্য সফট প্যাডিং, সিট কুশনিং এবং সাপোর্টিভ ব্যাকরেস্ট অপরিহার্য। একটি ভালো এক্সিকিউটিভ চেয়ার এই দিকগুলো বিবেচনায় নিয়ে তৈরি হয়।
পেশাদার লুক ও আত্মবিশ্বাস:
আপনার অফিসে প্রথম যে জিনিস চোখে পড়ে, তা হলো আপনার বসার চেয়ার। এক্সিকিউটিভ চেয়ারের স্টাইল ও ফিনিশিং আপনার পেশাদার ইমেজকে অনেকটাই প্রভাবিত করে।
অ্যাডজাস্টেবল ফিচারস:
উচ্চতা ঠিকমতো মেলানো যাচ্ছে না? কিংবা ডেস্কের সঙ্গে চেয়ার ঠিকভাবে মিলে না? অনেকেই এমন সমস্যায় পড়েন। অথচ সঠিক চেয়ার থাকলে কাজের সময় এসব ঝামেলা মাথায়ই আসে না।
একটা ভালো এক্সিকিউটিভ চেয়ারে আপনি সহজেই উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, টিল্ট করে একটু পেছনে হেলান দিয়ে বিশ্রাম নিতে পারেন। হেডরেস্ট আপনার ঘাড়টাকে ধরে রাখে আর আর্মরেস্টে হাত রাখলে কাঁধে চাপ পড়ে না।
এই ছোট ছোট জিনিসগুলো, যেমন চেয়ারটা একটু উপরে-নিচে করা, কিংবা হালকা পেছনে হেলানো, আমাদের শরীরকে ঠিকঠাক ভঙ্গিমায় রাখতে দারুণ সাহায্য করে। ফলে কাজের সময় মনও থাকে, শরীরও থাকে চাপমুক্ত।
দীর্ঘস্থায়ী আরাম
এই চেয়ারগুলোর বিশেষত্ব হলো আরামদায়ক সিটিং সিস্টেম। এতে ব্যবহৃত হাই-ডেনসিটি ফোম দীর্ঘদিনেও চ্যাপ্টা হয়ে যায় না। পাশাপাশি, উচ্চমানের কুশন কোমরের চাপ কমায়।
এছাড়া অধিকাংশ চেয়ারেই থাকে অ্যাডজাস্টেবল ফিচার, যেমন উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ, টিল্ট সিস্টেম, আর্মরেস্ট এবং কোমরের সাপোর্ট, যা আপনাকে সঠিক ভঙ্গিতে বসে কাজ করতে সাহায্য করে।
পরিপূর্ণ শরীরের সাপোর্ট
দিনভর বসে থাকার ফলে অনেকেই পিঠব্যথা কিংবা ঘাড়ে চাপ অনুভব করেন। এক্সিকিউটিভ চেয়ার (executive chairs) এসব সমস্যা কমাতে বিশেষভাবে তৈরি। এর লম্বা ব্যাকরেস্ট পিঠ থেকে শুরু করে ঘাড় পর্যন্ত সাপোর্ট দেয়।
অনেক মডেলে হেডরেস্টও থাকে, যা ভিডিও কল বা বিরতির সময় ঘাড়কে বিশ্রাম দেয়।
২০২৩ সালের Statista রিপোর্ট অনুযায়ী, যারা আরগোনমিক চেয়ারে বসে কাজ করেন, তাঁদের কাজের উৎপাদনশীলতা ১৭% পর্যন্ত বেড়েছে।
American Chiropractic Association জানিয়েছে, ভুল ভঙ্গিমায় বসা পিঠের ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ, যা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কর্মজীবনে প্রতি বছর গড়ে ১১ কার্যদিবস নষ্ট করে।
এক্সিকিউটিভ চেয়ারের কিছু খুঁটিনাটি বিষয়

যদিও এক্সিকিউটিভ চেয়ারের সুবিধা অনেক, কিছু বিষয় মাথায় রাখাও জরুরি
এক্সিকিউটিভ চেয়ার (Executive Chair) নিঃসন্দেহে আরামদায়ক, স্টাইলিশ এবং স্বাস্থ্যসম্মত , কিন্তু সব কিছুরই যেমন ভালো দিক থাকে, তেমনি কিছু ছোটখাটো সীমাবদ্ধতাও থাকতে পারে।
- আকারে একটু বড়: এই চেয়ারগুলো সাধারণত একটু বড় এবং ভারি গঠনের হয়। ফলে যদি আপনার ডেস্ক বা রুমটি ছোট হয়, তাহলে জায়গা একটু কম পড়তে পারে। ছোট ঘরের জন্য একটু বেশি জায়গা দখল করে ফেলে।
- মূল্য কিছুটা বেশি: ভালো মানের এক্সিকিউটিভ চেয়ার কিনতে গেলে কিছুটা খরচ পড়েই। তবে আপনি যদি প্রতিদিন ৬–৮ ঘণ্টা ডেস্কে বসে কাজ করেন, তাহলে এটি আসলে দীর্ঘমেয়াদে শরীরের জন্য এক ধরণের ইনভেস্টমেন্ট। আরাম, স্বাস্থ্যসচেতনতা আর স্থায়িত্ব বিবেচনায় এটা একেবারে যুক্তিসঙ্গত।
- ওজন একটু বেশি: চেয়ারগুলো সাধারণত ভারি হয়, ফলে এক ঘর থেকে আরেক ঘরে নিয়ে যেতে বা ঘন ঘন সরাতে হলে একটু কষ্ট হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই চেয়ার একবার বসালে অনেকদিন একই জায়গায় থাকে।
এই সীমাবদ্ধতাগুলোকে পাশে রেখে যদি ভাবা যায়, তাহলে যারা প্রতিদিন ডেস্কে দীর্ঘ সময় কাটান , তাদের জন্য আরামের দিকটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কারণ দিনের পর দিন ভুল ভঙ্গিতে বসে কাজ করলে যেসব শরীরিক সমস্যা হয়, তার তুলনায় একটা ভালো চেয়ার অনেক বড় সমাধান।
এক কথায় বললে, আপনি যদি আপনার কাজের গতি, মনোযোগ এবং শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে চান , তাহলে একটা ভালো এক্সিকিউটিভ চেয়ার আপনাকে প্রতিদিন একটু বেশি স্বস্তি দেবে, একটু ভালো অনুভব করাবে।
এক্সিকিউটিভ চেয়ার নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্ন
১. এক্সিকিউটিভ চেয়ার আর সাধারণ অফিস চেয়ারের মধ্যে পার্থক্য কী?
এক্সিকিউটিভ চেয়ার (Executive Chair) আর সাধারণ অফিস চেয়ারের মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে আরাম, সাপোর্ট এবং ডিজাইনে। এক্সিকিউটিভ চেয়ারগুলোতে থাকে উন্নত মানের প্যাডিং, লাম্বার সাপোর্ট, এবং পুরো পিঠ ও ঘাড়ের জন্য অতিরিক্ত সমর্থন। শুধু আরাম নয়, এগুলো দেখতে অনেক বেশি স্টাইলিশও হয়, যা আপনাকে আপনার কর্মস্থলে একটি পেশাদারিত্বের অনুভূতি দেয়।
২. এক্সিকিউটিভ চেয়ার কি পিঠব্যথা কমাতে সাহায্য করে?
এক্সিকিউটিভ চেয়ারের ডিজাইন পিঠব্যথা কমাতে সহায়ক। এর অনন্য লাম্বার সাপোর্ট এবং এরগোনমিক ডিজাইন পিঠ ও ঘাড়ের সঠিক ভঙ্গি নিশ্চিত করে, যা দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ফলে সৃষ্ট ব্যথা কমায়। এর ফলে আপনি সহজেই আরামদায়ক অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করতে পারবেন।
৩. হোম অফিসের জন্য এক্সিকিউটিভ চেয়ার কি উপযুক্ত?
অবশ্যই! হোম অফিসে কাজ করলে Executive Chair একটি আদর্শ পছন্দ। এটি শুধু আরামদায়কই নয়, কাজের স্পেসের সাথে মানানসই একটি পেশাদার লুকও দেয়। তবে, একে উপযুক্তভাবে ব্যবহার করতে আপনার কাজের পরিবেশ একটু বড় এবং খোলামেলা হলে আরও ভালো হয়।
৪. কীভাবে এই চেয়ারের যত্ন নেবেন?
এক্সিকিউটিভ চেয়ারের জন্য ভালো যত্ন গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত পরিষ্কার করা, স্ক্রুগুলো টাইট রাখা এবং চাকায় ধুলো জমতে না দেওয়া এই চেয়ারের স্থায়ীত্ব বজায় রাখে। এছাড়া, মাঝে মাঝে প্যাডিং ও কাভারগুলি চেক করেও সেগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
৫. এটি কি সত্যিই ভালো বিনিয়োগ?
যদি আপনি প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ডেস্কে বসে কাজ করেন, তাহলে এক্সিকিউটিভ চেয়ার অবশ্যই একটি ভালো বিনিয়োগ। এটি শুধুমাত্র শরীরের সঠিক সাপোর্ট দেয় না, বরং আপনার কাজের গতিও বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সুতরাং, স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষমতার জন্য এটি একে অপরের পরিপূরক।
৬. সব এক্সিকিউটিভ চেয়ারে কি অ্যাডজাস্টেবল ফিচার থাকে?
প্রায় সব ভালো ব্র্যান্ডের এক্সিকিউটিভ চেয়ারে অ্যাডজাস্টেবল ফিচার থাকে, যেমন হেডরেস্ট, আর্মরেস্ট, লাম্বার সাপোর্ট ইত্যাদি। তবে কেনার আগে চেয়ারের স্পেসিফিকেশন দেখে নেওয়া ভালো, যাতে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে সেটি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী পুরোপুরি অ্যাডজাস্ট হতে পারে।
শেষ কথা
তাহলে, এক্সিকিউটিভ চেয়ার কি সত্যিই দীর্ঘ সময় কাজের জন্য উপযুক্ত?
নিঃসন্দেহে, হ্যাঁ। আরামদায়ক ডিজাইন, শরীরবান্ধব সাপোর্ট, এবং নানা রকম অ্যাডজাস্টমেন্ট সুবিধা , সব মিলিয়ে এটি শুধু একটা বসার আসন নয়, বরং আপনার প্রতিদিনের কাজকে আরও স্বাস্থ্যকর ও প্রোডাক্টিভ করে তোলার একটি স্মার্ট সঙ্গী।
আমরা জানি, প্রতিদিনের কাজের চাপে নিজের শরীরের যত্ন নেওয়া প্রায়ই উপেক্ষিত থেকে যায়। কিন্তু বিশ্বাস করুন, সঠিক চেয়ার বেছে নেওয়া মানে নিজের প্রতি এক ধরনের যত্ন নেওয়া।
আপনি যদি ভাবেন, “কোন চেয়ারটা আমার জন্য ঠিক হবে?”, চিন্তার কিছু নেই। আমাদের টিম আপনার বাজেট, স্টাইল, ও চাহিদা বুঝে সাহায্য করতে একেবারে প্রস্তুত।
চাইলে আসুন, এক কাপ চা খেতে খেতে একসাথে বসে ঠিক করে নিই , কোন এক্সিকিউটিভ চেয়ারটি (Executive Chair) আপনার জীবনে একটু বাড়তি আরাম আর পেশাদারিত্ব এনে দিতে পারে।

